খেয়ালের জন্মবৃত্তান্ত সম্পর্কে কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন : খেয়াল নিয়ে আলোচনা করছি কারণ পাঁচটা গোলা লোকের তুলনায় ধ্রুপদ ধামার সম্পর্কে আমার জ্ঞানের পরিধি কিছুটা বড় হলেও খেয়াল ও ঠুংরী দাদরা আমার স্পেশালাইজেশনের ময়দান। তার চেয়েও উপযোগী কারণ ধ্রুপদ ধামার এখন এনডেন্জারড্ স্পিশিজ্, হিন্দুস্থানি সঙ্গীতের বিবর্তনে ভারতীয় চিতার মতো লুপ্তপ্রায় জানোয়ার। এর কারণ এ নয় যে সুদীর্ঘ ধ্রুপদী আলাপ কেউ শুনতে আর চায় না।
তা হলে উস্তাদ আমীর খাঁর গান বসে লোকে শুনত না, যন্ত্রসঙ্গীতেও আলাপ উঠে যেত বাজার থেকে! প্রধান কারণ ধ্রুপদের সরল আবেদন আর যুগোপযোগী নয়। ধ্রুপদের আলাপে মিড় সুত থাকলেও খেয়ালের বিস্তারের তুলনায় নিরাভরণ এবং আলাপ বাদ দিলে ধ্রুপদের রচনা মধ্যলয় বা দ্রুত লয়ের খেয়ালের বন্দিশের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না।
আর্ট ফর্ম হিসেবে খেয়াল এখন অনেক সমৃদ্ধ, কারণ ধ্রুপদের আলাপ থেকে খেয়াল নিয়েছে বিস্তার, ধামার থেকে বোল বাট ও লয়কারী, বোলবাটের ঠুংরি থেকে দ্রুত খেয়ালের কমপোজিশন। কাওয়ালি থেকে বোল বানানা, ঠুংরি থেকে পুকার ও মুড়কি। আর সবাইয়ের মনপ্রাণ হরণ করেছে এ যুগে তানকর্তব। তানের স্পিড নিয়ে মারামারিও যুগোপযোগী ব্যায়রামের লক্ষণ। উপর্যুক্ত সব কটি অঙ্গ অবশ্য অনেক খেয়ালিয়ার গণ্ডির বাইরে, তানের ব্যাপারে তাঁদের মধ্যে রুচিভেদ নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যাদের মধ্যে ড. বিমল রায়ের নাম সর্বাগ্রে করব, প্রাচীন প্রবন্ধের অনুকরণে সৃষ্ট গীত চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে সুফী কব্বাল মুসলমান গায়কদের সহায়তায় আমীর থুসরোর দ্বারা প্রবর্তিত এবং প্রচারিত হয়েছিল। এই বস্তুটি খেয়ালের জনক। প্রথম ধ্রুপদের উল্লেখ পাচ্ছি পঞ্চদশ শতাব্দীতে গোয়ালিয়রের মান সিং তোমরের সময়। তাহলে উপযুক্ত থিয়োরি অনুসারে খেয়াল জন্মেছে ধ্রুপদের আগে। এই কবালী মার্কা খেয়ালের প্রচারক আমীর খুসরো হতে পারেন, প্রবর্তক কি না এ নিয়ে মতান্তর আছে।
মুঘল যুগের ইতিহাসের ওপর নামকরা অথরিটি ড. ইরফান হাবিবের পিতা মহম্মদ হাবিব বলেন, বহু পাঁজি-পুঁথি ঘেঁটেও উনি কোনও প্রামাণ্য ঐতিহাসিক তথ্যর সম্মুখীন হননি যে আমীর খুসরো আদৌ হিন্দুস্থানি গান করতেন। জিয়াউদ্দিন বর্নি তাঁর ‘তারিখ-ই-ফিরোজশাহীতে লিখে গেছেন এ প্রকারের মরমী কবি কয়ামৎ-এর পূর্বে আর জন্মাবে না, আমি বহু কাল ওঁর সান্নিধ্য পেয়েছি এবং শেখ নিজামুদ্দিন আউলিয়া এবং আমীর খুসরোর ভালবাসা পেয়ে ধন্য হয়েছি। আমীর খুসরো নিজে একটি কিতা’য় বলছেন, ‘আমি কবিশ্রেষ্ঠ এবং সঙ্গীতে উস্তাদ। আমি তিন খণ্ডে আমার কবিতা লিখেছি এবং আমার রচিত গান যদি একত্র করা যায়, তাও তিন খণ্ডর কম হবে না।’
ইদানীংকালের মৌলানা শিবৃলি ঔরঙ্গজেবের সময়ে অর্থাৎ চারশো বছর পরে লেখা ‘রাগদর্পণ’ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে আমীর খুসরোকে নায়ক বলে অভিহিত করছেন এবং সেই সঙ্গে নায়ক গোপালকে পরাজিত করার কিংবদন্তীর উল্লেখ করেছেন, কিন্তু বলি খুসরোর সমসাময়িক, তিনি ওঁকে সর্বকালীন শ্রেষ্ঠ গদ্য ও ফারসি কাব্যের রচয়িতা ও সংস্কৃতিবান পুরুষ বলেছেন বড় গায়ক বলেননি কোথাও। তবে উনি গানবাজনা খুবই ভালবাসতেন এবং নিজামুদ্দিন আউলিয়ার ভক্ত হিসেবে কাওয়ালি সঙ্গীত যা আসলে ধর্মসঙ্গীত, তার বিরাট পৃষ্ঠপোষক ছিলেন ওঁর দেশি ও ফারসি ভাষায় রচনা বহু কাল ধরে গাওয়া হয়েছে।
তা ছাড়া আলাউদ্দিন খিলজির দরবারে উনি একজন কেউকেটা অতএব ওঁর নাম দিয়ে বহু প্রক্ষিপ্ত রচনা চালু হয়েছিল ওঁকে খোসামোদ করার অভিপ্রায়ে এ প্রকার অনুমান অসঙ্গত নয়। কব্বালী বা কব্বাল, যার সঙ্গে খেয়াল কথাটার আশ্চর্যজনক মিল আছে তা সুফী মুসলমানদের মধ্যে অনেক আগেই প্রচলিত ছিল এবং এর আমদানী তৎকালীন পারস্য দেশ থেকে, এও ঐতিহাসিকদের মত। আমীর থুসরোর মৃত্যু পূর্বে ১৩২৪ সালে রচিত ‘সঙ্গীতোপনিষদ সারোদ্ধার’-এ প্রসিদ্ধ জৈন আচার্য সুধাকলষ লিখছেন, ঢোল যা কব্বালরা ব্যবহার করত তা হল ম্লেচ্ছ বাদ্য, বিদেশ থেকে এসেছে।
ভারতের চির্তি সুফীদের আদি পুরুষ খাজা মৈনুদ্দিন আজমীরি এবং তাঁদের শিষ্য হামিদুদ্দিন, নাগোরির প্রসিদ্ধ কব্বাল আমীর খুসরোর জন্মের বহুপূর্বে সুলতান ইলতুৎমিসের (১২১০-১২৩৫) দরবারে গান করতেন। পাকিস্তানের ঐতিহাসিক জনাব রশিদ মালিক লিখছেন ‘কব্বালি ঔর তরানা আমীর খুসরোকে বহুত্ পহলেকি চীজে হৈ, হম্ কব্বালিকো হরগিজ অমীর খুসরোকি ইজাজ নহী কর সকতে।’ এই কব্বালির ভাষা ছিল প্রধানত দেশি বা মধ্যদেশি যা দিল্লির সাধারণ লোকের বোধগম্য হতে পারে। খেয়ালের বৃজভাষার সঙ্গে এর বিশেষ কোনও পার্থক্য নেই।
অতএব দুই তুকের দেশি ভাষায় রচিত খেয়াল কব্বালিও লোকগীতির মিশ্রণ এ ধরে নিতে আমাদের অসুবিধে হওয়া উচিত নয়। অর্ধেন্দু গাঙ্গুলী তাঁর The Story of Indian Music নামক পুস্তকে লিখছেন আমীর খুসরোর শাগীদরা যাঁরা কবালী সঙ্গীতের মাহের বা উস্তাদ ছিলেন তাঁদের আখ্যা দেওয়া হত কব্বাল বা কলাবস্ত (এই কথাটি থেকেই আমাদের কালোয়াতী কথাটির উদ্ভব)। এঁরা গাইতেন প্রধানত ধর্মসঙ্গ পীত যা হিন্দুদের ভজনের সমতুল্য। তানসেনের যুগের পূর্বে কব্বাল, কলাবন্ত এবং ধ্রুপদীদের পদমর্যাদা একই ছিল। ধ্রুপদ যখন নবাব বাদশার দরবারে উন্নীত হল তখন কব্বাল ও কলাবত্তদের (এ ক্ষেত্রে খেয়ালীয়া) মর্যাদা স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুণ্ণ হল। সদারঙ্গ অদারঙ্গর আবির্ভাব যতদিন না হয় ততদিন খেয়াল ধ্রুপদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম হয়নি।
ভাল কথা। কিন্তু উপযুক্ত বিশেষজ্ঞরা কেউই তাঁদের মতের সমর্থনে কোনও তথ্য দেননি। মোটামুটি ধরে নেওয়া যেতে পারে আমীর খুসরোর দৌলতে কবালদের মতোই খেয়ালের এবং খেয়ালীদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হল এবং বেশ কিছু দেশি ভাষায় রচিত গান আমীর খুসরোর নাম দিয়ে গাওয়ার রেওয়াজ চালু হল। ড. মধুবালা সক্সেনা, কুরুক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোফেসর, তাঁর ‘থ্যাল শৈলী কা বিকাশ’ নামক পুস্তক থেকে
দুটি আমীর খুসরোর রচনার উদ্ধৃতি দিচ্ছি।
বহুত্ কঠিন হৈ ডগর পনঘট কি কৈসে কে ভর লু মৈ যমুনা সে মটকী মৈ তো গয়ি থি যমুনা ভরন কো দৌড় ঝপট মোরি মটকী পটকি খুসরো নিজামুদ্দিন বলি বলি জয় লাজ রখো মোরি ঘুংঘট পট কি ইন চুড়িয়ো কি লাজ পিয়া রখনা ইয়ে তো গৈর লয়ি অব উত্সত না। মেরে ভাগ সুহাগ তুম্হি সে হৈ মৈ তো তুহি পে যোবনা লুটা বইঠি বস লাজ রখো মোরে ঘুংঘট কি।
যাঁরা খেয়াল গান তাঁরা লক্ষ করবেন উপর্যুক্ত রচনায় গ্রাম্য বৃজভাষার সঙ্গে সরল হিন্দি কথার প্রয়োগ হয়েছে। আর এর বিষয়বস্তুর সঙ্গে খেয়ালের ‘থিম’ বা বিষয়বস্তুর কোনও পার্থক্য নেই। সেই শ্রীকৃষ্ণের বাললীলা, সেই যমুনায় জল ভরতে যাওয়া, সেই নটখট শ্যামের দৌরাত্ম্যে মটকীর মস্তক থেকে পতন। শুধু শ্যামের বিরুদ্ধে ভগবানের কাছে আবেদন না করে শরণ নেওয়া হল খুসরো এবং তাঁর গুরু নিজামুদ্দিনের কাছে। এ আমীর খুসরোর রচনা হলে খুব উচ্চমানের রুচির পরিচায়ক নয়। মনে হয় কোনও থুসরো ভক্তর রচনা এবং এ সাধারণ তৈল নয়, মোটা তেল।
নিম্নলিখিত গানটি হয়তো প্রক্ষিপ্ত নয়। বলা বাহুল্য এ দুটিই কব্বালি, খ্যাল। জয় জয় নিজামুদ্দিন জয় তারণ যো পর মৈ প্রাণ করু বারণ। থুসরো কে প্রভু আহমদ কে পুত তন মন ঔর ধন করু নিবারণ। ঠাকুর জয়দেব সিং দর্শন ও সঙ্গীতশাস্ত্রের নাম করা পণ্ডিত। তাঁর বক্তব্য এবার
শোনা যাক। I maintain that the so called khyal style of musical compo
sition is nothing but only a natural development of Sadharan Giti which used the exquisite features of all the styles. It is this Sadharan Giti with this predominant use of bhinna in it that became the khyal… There is definite proof, therefore, that such styles of musical compositions have been in existence in Indian music at least from 7th or 8th Century A. D.
The Sadharani style of composition, with generous and plentiful use of gamakas became our khyal composition… Khyal exploited all the famous without bothering about their names-khatka, murki, meend, kamp, andolan- everything was beautifully woven in its structure… when Amir Khusro in the 13th Century heard the ornate style or rupak alapti full of so much embellishments he could not think of designating this music of creative imagination better than by the word khyal…
khyal was neither imported from Arabia nor Persia. There was certain style of musical composition and a certain style of rendering already prevalent in Indian music. Khyal was only a natural development of that style. Neither Amir Khusro invented it nor did the Sharqui king of Jaunpur, though each of them may have lent a hand in its development. (Commemoration Volume of Dr. S. N. Ratanjankar-1961)
ঠাকুর জয়দেব সিং, যদিও কোনও প্রামাণ্য তথ্যর ওপর নিজের বক্তব্য পেশ করেননি, উনি বলছেন গভীর আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে যে ত্রয়োদশ শতাব্দী কেন সপ্তম বা অষ্টম শতাব্দী থেকেই এই গীতের প্রচলন হয়। স্বাভাবিক ভাবেই সাধারণ গীতির বিবর্তন হয়েছে খেয়ালে এবং তাতে কল্পনা সৃজনীশক্তি এবং অলঙ্কারের প্রয়োগের মধ্যে এমনই মনোমুগ্ধকর সামঞ্জস্য ছিল যে আমীর খুসরো মোহিত হয়ে নাম দিয়েছিলেন ‘খ্যাল’, এর চেয়ে লাগসই নাম আর হয় না। আরব পারস্য থেকে এ গীতিরূপ আমদানি হয়নি। ভারতের মাটিতেই এর উৎপত্তি। এর জন্য আমীর খুসরো বা পঞ্চদশ শতাব্দীর সুলতান শৰ্কীকে কোনও কৃতিত্ব দেওয়া যায় না। খেয়ালের প্রসারের জন্য যে কৃতিত্ব, অবশ্যই তাঁরা তার দাবিদার।
বাদশাহ্ আকবরের সময় তাঁর অমাত্য আবুল ফজল-এর ‘আইন-ই-আকবরী’তে লিখিত রয়েছে :
যে গীত জৌনপুরে প্রচলিত তাকে বলে ‘চুটকলা’। তিলঙ্গ ও কর্ণাটকের ভাষায়
রচিত গীতকে ‘ধরু’ বলা হয়, বাংলায় প্রচলিত গীতের নাম ‘বঙ্গলা’, দিল্লিতে যে গীত গাওয়া হয় তার নাম কওল ও তরানা। আমীর খুসরো দহলবী সমুত ও তাতার নামক দুজন গায়কের মুখে শোনা তাঁদের ভাষার গীত ভেঙে এই ধরন দুটির প্রবর্তন এবং এই উদ্দেশ্যে ফারসি, সাউৎ, নক্শ, এই সকল গীতপদ্ধতি এবং হিন্দি গীতপদ্ধতি অবলম্বন করেন। এতে এই গীত দুটি
অধিকতর মনোহারিত্ব অর্জন করে। (মূল ফারসি থেকে রাজ্যেশ্বর মিত্র দ্বারা অনূদিত)। অতঃপর ‘মুঘল ভারতের সঙ্গীতচিত্তা’ নামক পুস্তিকার মুখবন্ধে রাজ্যেশ্বরবাবু লিখছেন :
‘যদিও আমীর খসরুওয়ের ভারতীয় সঙ্গীতে দান নিয়ে বহু কিংবদন্তী গড়ে উঠেছে তথাপি আসল সত্য এই যে, তিনি ভারতীয় সঙ্গীতের প্রতি শ্রদ্ধান্বিত
ছিলেন না। তিনি নিজেকে ভারতীয় বলে স্বীকার করতেও দ্বিধা বোধ করতেন। [ওঁর মা ভারতীয়, বাবা তুর্কী।] ভারতীয় সঙ্গীতকে নিষ্প্রভ করার উদ্দেশ্যেই তিনি পারসীক সঙ্গীতের মিশ্রণ আনতে চেয়েছিলেন। মূল ভারতীয় রাগকে ফার্সী সঙ্গীতের সঙ্গে মিশ্রিত করে ফার্সী নাম দেওয়ার একটি প্রথাও তিনি প্রবর্তন করেন। ফার্সী ভাষায় খুসরওয়ের অসাধারণ ব্যুৎপত্তি ছিল এ বিষয়ে
সন্দেহ নেই, কিন্তু ফার্সী সঙ্গীত সম্বন্ধে তাঁর অনুরূপ ব্যুৎপত্তি ছিল কিনা এ বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ বর্তমান। পারস্যের সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ যোগ ছিল না। ভারতে আগত পারসীকদের কাছ থেকে অথবা ভারতে প্রচলিত পারসীক সঙ্গীত থেকেই তিনি শিক্ষালাভ করেছিলেন। এক্ষেত্রে যেসব মিশ্রণ তিনি করেছেন তার সার্থকতা এবং গুরুত্ব যে খুব বেশি ছিল এমন মনে হয় না। ফলে তাঁর সৃষ্ট খুব কম রাগই আজ পর্যন্ত প্রচলিত আছে। কওল বা কাওয়ালী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার কারণ তার কাব্যগুণ।
নায়ক গোপাল খুসরওয়ের কাছে প্রকৃতপক্ষে পরাজিত হননি। পরাজয়টি চাতুরী করে তাঁর উপর আরোপ করা হয়েছে। মুসলমান লেখকগণ একবাক্যে গোপালের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করেছেন। তবে খুসরওয়ের প্রতিভার শ্রেষ্ঠত্ব এইখানে যে, লঘুভাবে হলেও তিনি একটি নতুন সৃষ্টির প্রচেষ্টা করেছিলেন। সনাতনপন্থী ভারতীয় সঙ্গীতকে তিনি মুক্তির একটা পথ দেখালেন। এই সময় থেকেই রাগসঙ্গীতে মিশ্রণের একটা প্রেরণা দেখা দেয়। বস্তুতঃ মুসলিম যুগের একটা প্রধান প্রচেষ্টাই হল ভারতীয় রাগসঙ্গীতে মিশ্রণদ্বারা সৌন্দর্য সম্পাদন।
নর্মদেশ্বর চতুর্বেদী (সঙ্গীতজ্ঞ কবিয়োঁকি হিন্দি রচনায়ে) বলেছেন আকবরের সময়ে জৌনপুরের সুলতান হুসেন শাহ্ শর্কীর সময়ে খেয়ালের বোলবোলাও হয়। আমীর থুসরোর সময়ে কবালির অনুকরণে দ্রুত খেয়ালের বহুল প্রচলন হয়েছিল কিন্তু বিলম্বিত খেয়ালের আবিষ্কর্তা জৌনপুরের সুলতান। উমেশ জোশির (‘ভারতীয় সঙ্গীত কা ইতিহাস’) মতে এই শকীরই সৃষ্টি জৌনপুরী তোড়ী, সিন্ধু ভৈরবী এবং রসুল তোড়ী।
[ খেয়ালের জন্মবৃত্তান্ত – কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ]
আরও পড়ুন: