ভারতীয় সঙ্গীতের গবেষণা বিষয়ে কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন: ভারতীয় সঙ্গীত সম্পর্কে লেখা তিন প্রকারের। ভরতমুনি থেকে মতঙ্গ ও শার্সদেব হয়ে। ভাতখণ্ডে পৌঁছতে পৌঁছতে এক দল লেখক সারা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। এঁরা সঙ্গীত যে পারফর্মিং আর্ট এ দিকে বিশেষ নজর দেননি। আজ থেকে তিনশো বছর আগে ভূপালীর নাম ডোম্বক্রী ছিল কী ছিল না এ নিয়ে পাতা ভরিয়ে ফেলেছেন। একে ইংরেজিতে বলে স্কলারশিপ। বাংলায় পাণ্ডিত্য এবং আমেরিকায় এর বহুং কদর। এঁদের প্রতি আমি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল কিন্তু আমি বেজাতের মানুষ, আমার অনুসন্ধিৎসা সেই বিষয়ে যার সঙ্গে বর্তমান যুগের সম্পর্ক আছে।
দ্বিতীয় প্রকারের লেখকের দায়রা শুরু হয়েছে পণ্ডিত ভাতখণ্ডে এবং পরবর্তী যুগে। ভাতখণ্ডে দেখলেন শাস্ত্রোক্ত রাগের চেহারার সঙ্গে বর্তমান যুগের রাগের কোনও মিল নেই। অজস্র রাগের মধ্যে তিনটি সরল উদাহরণ দিচ্ছি। পঞ্চদশ শতাব্দীর ‘মানকুতুহল’ এ মালকোষ সম্পর্কে লেখা আছে হিন্দোল, বসন্ত, জয়জয়ন্তী, পঞ্চম খট্টাগ, মারু, সারঙ্গ ও সাওনী—এইগুলি একত্র করে গাইলে মালকোষ রাগ উৎপন্ন হয়। এই রাগ ও হিন্দোল বসন্তকালে গেয়। সময় প্রাতঃকাল। বসন্ত রাগ সারঙ্গ নট মহলার, বিলাবল ও দেওগিরির মিশ্রণে উৎপন্ন। ভূপালি নাকি ইমন ও ভোরের রাগ গুণকেলির মিশ্রণ।
বেশির ভাগই এসব আমাদের কল্পনার বাইরে। ইতিমধ্যে আমাদের প্রাচীন কাফি স্কেল বদলে শুদ্ধ স্বরের বিলাবল স্কেল হয়ে গেছে। অতএব উনি শুরু করলেন সংগ্রহের কাজ। ওঁর যৌবনে পার্সিরা বোম্বাই শহরে গায়ন উত্তেজক মণ্ডলী নামে একটি সংস্থা স্থাপন করেন। এঁরা শুধু গানবাজনার আসরই করতেন না, ধ্রুপদী রাওজি বুয়া বেলবাউকর ও খেয়ালিয়া আলি হুসেনকে নিযুক্ত করেছিলেন গান শেখানোর জন্য।
এঁদের কাছ থেকে শ তিনেক ধ্রুপদ ও বহু খেয়াল দিয়ে ভাতখণ্ডের সংগ্রহের শুরু। এরপর উনি গাণ্ডা বাঁধান নাজির খাঁর কাছে এবং তারপর জয়পুরের মহম্মদ আলি খাঁর ছেলে আশিক আলির কাছে। এঁদের ঘরানাকে কোঠিওয়াল বলা হত কারণ এঁদের বন্দিশের ভাঁড়ার বিরাট। তিন মাসের মধ্যে ভাতখণ্ডেজি আড়াইশর ওপর খেয়াল স্বরলিপি তৈরি করে ফেলেন।
পরবর্তীকালে উনি রামপুরের নবাব হামিদ আলিকে দিয়ে গাণ্ডা বাঁধান। উদ্দেশ্য ছিল নবাব সাহেবের গুরু সেনী নার শেষ বড় উস্তাদ বজির খাঁর কাছ থেকে তার বিরাট ধ্রুপদের সংগ্রহ বাগানো। গোয়ালিয়র ঘরানার খেয়ালের জন্য উনি রাজাভইয়া পুছবালের দ্বারস্থ হন, আগ্রার বন্দিশের জন্য উস্তাদ ফৈয়াজ খাঁর কাছে যিনি ভাতখণ্ডেজির প্রধান শিষ্য শ্রীকৃষ্ণ রতনজনকরের গাণ্ডা বেঁধে দেন। রামপুরের মুশতাক হুসেন খাঁর কাছ থেকে উনি সংগ্রহ করেন উস্তাদ বাহাদুর হুসেন খাঁর তরানা।
মুশতাক হুসেনের দুই গুরু বাহাদুর হুসেন ও শ্বশুর এনায়েৎ হুসেন খাঁর বিখ্যাত বহু বন্দিশ। এই এনায়েত্ হুসেন খাঁই আচার্য গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তীর গুরু যাঁর দৌলতে এ অঞ্চলে ওঁর বেশ কয়েকটি বন্দিশ, যথা ছায়ানটের ঝনন নন, গৌড়মহলারের পাপি দাদুরবা বুলাই, মারুবেহাগের তড়পত রৈন দিন, হাম্বীরের দ্রুত আড়া চৌতালে দেখি অ্যায়সি পিয়ারী লাডলীকি চালু হয়।
এই এনায়েত্ খাঁর গান রাখা হয়েছিল সেনেট হলে। তৎকালীন বখারা রবিবাবুর গান শুনব, শুনতে চাই, শুনতে চাই, বলে নারা লাগিয়ে আসর ভণ্ডুল করে দেয়। রবীন্দ্রনাথ সেইখানেই এনায়েত্ হুসেন থাকে উদ্দেশ্য করে গাইলেন, ‘কেমন করে গান কর হে গুণী, আমি অবাক হয়ে শুনি।’ অনেকে দাবি করেন এ গানের রচনা সেতারি ওস্তাদ বিলায়েৎ খাঁর পিতা এনায়েত্ থাকে উদ্দেশ্য করে। কিন্তু তা ঠিক নয়।
এঁরা আমার গুরুবংশ। যাঁরা আমাকে আগ্রা ঘরানার গায়ক হিসেবে জানেন তাদের জ্ঞাতার্থে জানাই আমি মুশতাক হসেন খাঁর গাণ্ডাবদ্ধ শাগীদ এবং সহসওয়ান ও আগ্রা এই দুই ঘরের গোলাম। মুশতাক হুসেন সম্পর্কে ভাতখণ্ডেজি ধূর্জটিপ্রসাদকে বলেছিলেন হিন্দুস্থানের চার আনা আস্থায়ী এঁর কাছে আছে। এই দুই ঘরানার যে অমূল্য রত্নরাজি তা একজন্মে শিখে শেষ করা যায় না। আর শেখার আগ্রহও বর্তমান প্রজন্মের নেই। নচেৎ সঙ্গীত রিসার্চ আকাডেমির টেপের সংগ্রহও বিশাল এবং তার সদ্ব্যবহার করতে ইচ্ছুক এ তল্লাটে কাউকে দেখছি না।
[ ভারতীয় সঙ্গীতের গবেষণা – কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ]
ভাতখণ্ডেজির সংগ্রহের স্বরলিপি ছাড়া তাঁর অবদান দুটি। এক, তাঁর মৌলিক গবেষণা ও ঠাট ধরে রাগের বর্গীকরণ ও দুই, তাঁর টাইম স্কেল থিওরি। কিছু লোক আছেন যাঁরা ঠাট মানেন না, দক্ষিণে কেউ টাইম স্কেল থিওরি মানেন না, হংসধ্বনি দিয়ে তাঁদের আসর শুরু হয়, সন্ধ্যায় ভৈরবী অর্থাৎ ওঁদের তোড়ি গাওয়া হয়, মালকোষ বা হিন্দোলম্ দ্বিপ্রহরে গাইলে শ্রোতারা ডাইনে বাঁয়ে মাথা নেড়ে বাহবা দেয়।
কিন্তু বর্গীকরণ বা ভাতখণ্ডেজির দশ ঠাটি স্কুলই কলেজ মেনে নিয়েছে এবং সব কারিকুলামেরই এসব অন্তর্ভুক্ত। উত্তর ভারতে আমরা টাইম স্কেল থিওরি মোটামুটি মানি। আমরা রাত্রে ভৈরব রাগ গাইলে কিংবা কাঠফাটা গ্রীষ্মের দুপুরে মালকোষ বা দরবারি শুনলে আমাদের সংস্কার বিদ্রোহ করে ওঠে।
অধুনা বিস্মৃত স্কট্স দার্শনিকরা সব কিছুই অ্যাসোসিয়েশন অফ আইডিয়াজ বা ভাবষঙ্গ দিয়ে ব্যাখ্যা করতে চান তা না হলে মাদ্রাজিরা কানাড়া বা মালকোষ (হিন্দোলম্) দিব্য সকালের আসরে ডাইনে বাঁয়ে মাথা নেড়ে গেয়ে বাজিয়ে আনন্দ লাভ করেন কি করে? এ ব্যাখ্যা কিন্তু পুরোপুরি সঙ্গীতজগতের মানুষ হয়ে মানতে মন চায় না। মিঞা মহলারের নিধ নি, জলধর কেদারার মা রে মা, মহলারের কোমল গান্ধার দক্ষ আর্টিস্টের হাতে বর্ষার ঘনঘটার আমেজ আসরে উপস্থিত করে।
কোমল রেখাবের সঙ্গে শুদ্ধ মধ্যম যুক্ত হলে ভোরের কিরণচ্ছটার স্নিগ্ধ শুচিতার আভাস আসে। কোমল রেখাবের সঙ্গে তীব্র মধ্যম গোধূলির বৈরাগ্য অতি বড় কট্টর যুক্তিবাদীর মনকেও আচ্ছন্ন করবে যদি সাচ্চা সুরের স্বরপ্রয়োগ হয়। রাত্রের রাগগুলিতে আমি শৃঙ্গাররস পাই, বেশ কিছু রাগ তামসিক প্রকৃতির।
ভোরের রাগ বা সন্ধ্যার, অর্থাৎ সন্ধিক্ষণের রাগের মধ্যে উদাস করে দেওয়ার ক্ষমতা আছে। এর সঙ্গে মনে হয় শরীরের মেটাবলিজমের সংযোগ আছে। নিছক অ্যাসোসিয়েশন বলে তো মনে হয় না। রবীন্দ্রনাথ তাঁর অননুকরণীয় ভাষায় বলছেন ‘আমাদের কালোয়াতি গানটা ঠিক যেন মানুষের গান নয়, তাহা যেন সমস্ত জগতের।
ভৈরো যেন ভোরবেলাকার আকাশেরই প্রথম জাগরণ। পরজ যেন অবসন্ন রাত্রিশেষের নিদ্রাবিহুলতা; কানাড়া যেন ঘনান্ধকারে অভিসারিকা নিশীথিনীর পথবিস্মৃতি, ভৈরবী যেন সঙ্গবিহীন অসীমের চিরবিরহবেদনা; মূলতান যেন রৌদ্রতপ্ত দিনান্তের ক্লান্তিনিশ্বাস; পূরবী যেন শূন্যগৃহচারিণী বিধবা সন্ধ্যার অশ্রু-মোচন।’ (সংগীতের মুক্তি)
এসব ছাড়া হিন্দুস্থানি সঙ্গীতে ভাতখণ্ডেজির মাহাত্ম্য দুটি কারণে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এবং বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে রাগরূপ সম্পর্কে ঘোরতর মতানৈক্য ছিল। উদাহরণ একটি দিচ্ছি, দেওয়া যেতে পারে একাধিক। মীরাবাঈকি মহলারের রূপ অড়না ও মিয়া মহলারের যোগফল।
ধ্রুপদী উস্তাদ আল্লাদিয়া খাঁর জয়পুর ঘরানার ‘তুম ঘন সে’ বন্দিশ যাঁরা মল্লিকার্জুন মনসুরের বা পুরনো কালে কেসরবাঈ ও মোঘুবাঈয়ের মুখে শুনেছেন তাঁরা কোমল ধৈবত তো খুঁজে পাবেনই না, উপরন্তু এ রাগের মুখড়া শেষ হচ্ছে সা রে মা দিয়ে। এতে সুরদাসী মহলারের অঙ্গ লাগছে আবার কোমল গান্ধারও আছে। এটিতে রইসা কানাড়া ও সুরদাসীমহলারের মিলন ঘটেছে। এই জয়পুরেই আবার কিছু গায়ক একে ধুরিয়া মহলার বলে গান।
আগ্রা ঘরানায় ‘আবন হার ভয়ো’ মুম্বই ব্রাঞ্চ গান ধুরিয়া সারং বলে, আতরৌলী শাখা একেই বলেন ধুরিয়া মহলার। এখনই যখন এ প্রকার শতেক ঝামেলা, ভাতখণ্ডেজির আমলে কী মাৎস্যন্যায় ছিল আন্দাজ করুন। এক দিকে যেমন ছিল বৈচিত্র্য, অন্য দিকে অরাজকতা। নতুন করে শাস্ত্র গঠন করা ওঁর এবং ওঁর প্রধান শিষ্য রতনজনকরের প্রচেষ্টায় এর প্রসার ভাতখণ্ডেজির বিরাট একটি দান।
এর জন্য বিভিন্ন ঘরানার উস্তাদদের একত্র করে রাগের স্ট্যান্ডার্ডাইজেশনের কাজ ভাতখণ্ডেজি করেন ওঁর পরিচালিত অল ইন্ডিয়া মিউজিক কনফারেন্সের শেষে। প্রথমটি হয় বরোদায় ১৯১৬ [?] সালে। এই হল আমাদের হিন্দুস্থানি সঙ্গীতের ইহিাসে প্রথম সেমিনার।
এর একটি নমুনা পাঠক পাবেন আমার ‘কুদরত রঙ্গিবিরঙ্গী’-র পরিশিষ্টে, যাতে, ১৯২৫ সালের ৯ থেকে ১৪ জানুয়ারিতে গ্র্যান্ড কনফারেন্সের [চতুর্থ অল ইন্ডিয়া মিউজিক কনফারেন্স] কলাকারদের লিস্টি ও আলোচনার বর্ণনা দেওয়া আছে।
এতে অংশগ্রহণ করেন আলাউদ্দিন খাঁ, শ্রীকৃষ্ণ রতনজনকর, রামপুরের যন্ত্রী ফিদা হুসেন খাঁ, মুশতাক হুসেন খাঁ, ইন্দোরের মজিদ খাঁ, কলকাতার গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, রাধিকাপ্রসাদ গোস্বামী, মথুরার ধ্রুপদ-ধামার শিল্পী চন্দন চৌবে, আমিনুদ্দিন খাঁ ডাগরের পিতামহ উস্তাদ আল্লাবন্দে খাঁ এবং তাঁর বড় ভাই জাকিরুদ্দিন খাঁ।
গুণিজনদের মধ্যে ছিলেন স্বয়ং বিষ্ণুনারায়ণ ভাতখণ্ডে, মুম্বাইয়ের এস এন কার্নাড, দিলীপকুমার রায়, পুনার ডি কে এবং এম কে জোশি, আজমীরের প্রেম বল্লভ যোশী, বাদীলালজি শিবরাম, লখনউয়ের অধ্যাপক ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি ঠাকুর নবাব আহমদ আলি খাঁ, যাঁর ‘সরিফ উন্ নগামত’ নামক সঙ্গীতের ওপর পুস্তক তার কিছুকাল পরেই প্রকাশিত হয়।
ভাতখণ্ডেজির মহত্তম অবদান উচ্চ মার্গ-সঙ্গীতকে সাধারণ অর্থাৎ, মধ্যবিত্ত সমাজের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া। ইতিপূর্বে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত লোকসঙ্গীত থেকে উদ্ভূত হলেও নবাব বাদশাদের দরবারে কয়েদি হয়েছিল। এর ফল ভাল হয়েছে কী খারাপ হয়েছে সে মূল্যায়ন করার প্রয়োজন নেই, কী হয়েছে সেটা অবশ্যই পরিষ্কারভাবে জানা এবং বোঝার দরকার। তবে সমাজতাত্ত্বিকের ছাত্রকে মনে করিয়ে দিতে হবে যে সঙ্গীতের সামাজিক পরিবর্তনের চাপ এসেছিল বলেই ভাতখণ্ডেজি অনুঘটকের [catalytic agent] ভূমিকায় সাফল্য পেয়েছিলেন।
কার্ল মার্কসের যেমন লেনিন, ভাত খগুেজির চিন্তা ও উচ্চাশাকে কার্যে পরিণত করার কৃতিত্ব তেমনই শ্রীকৃষ্ণ রতনজনকরের। এঁর লেখাও রাগসঙ্গীতের রাগরূপ নিয়ে। এ ছাড়া ওঁর নিজের বহু কম্পোজিশন এবং তানমালিকা পুস্তকাকারে বের হয়েছে। ওঁর শিষ্য-শিষ্যারা বেশ কিছু বই ও মূল্যবান প্রবন্ধ লিখেছেন। যাঁদের মধ্যে ড. মিসেস সুমতি মুতাটকর, কে জি গিওে, সুশীলা মিশ্র, দিনকর কাইকিনী প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।
রাগসঙ্গীত, ধ্রুপদ ও খেয়াল নিয়ে প্রচুর ইংরেজি ও হিন্দিতে লেখা হয়েছে কিন্তু ‘কুদ্রত্ রঙ্গিবিরঙ্গী’ ও ‘মজলিস’ লেখার সময় সবচেয়ে অভাব বোধ করেছি এমন ধরনের বইয়ের যাতে খেয়ালের বিভিন্ন অঙ্গ, বিভিন্ন ঘরানার শৈলীর বৈশিষ্ট্য ও আঙ্গিকের পারস্পরিক তুলনা আছে। এ নিয়ে বেশ কিছু আলোচনা আমি করবার চেষ্টা করেছি।
গত সাত বছরে আরও কিছু জ্ঞানের পরিধি মনে হয় বেড়েছে উপযুক্ত ফোর্ড ফাউন্ডেশনের রিসার্চের কাজে, তাই এই প্রবন্ধে লেখবার ইচ্ছে নিয়ে বসেছি। দুর্ভাগ্যবশত লেখার মাধ্যমে সঙ্গীতালোচনা হয় না। এ যেন ভাল ভাল খাদ্যদ্রব্যের বর্ণনা কোথাও কোথাও তার রেসিপি ও রঙিন ছবি।
খাদ্যের আলোচনায় যেমন রসনাকে সুযোগ দেওয়ার প্রয়োজন, সঙ্গীত সম্পৰ্কীয় আলোচনায় প্রয়োজন গান বা বাজনার রেকর্ডিং এর উদাহরণ। অর্থাৎ এ-কার্য চোখের নয়, কানের। বিশদ বিশ্লেষণসহ আমি ছটি ঘরানার ওপর আমার বক্তব্য ক্যাসেটবদ্ধ করেছি। শুনতে পাচ্ছি শীঘ্রই সঙ্গীত রিসার্চ আকাডেমি এগুলি শোনার সুযোগ আমজনতাকে দেবেন। বর্তমানে এগুলি যতদূর জানি আকাডেমির গুরু বা ছাত্ররা কেউই শোনবার মতো উৎসাহ পাননি।
তৃতীয় এক শ্রেণীর লেখায় একটু ভিন্ন দিক থেকে হিন্দুস্থানি সঙ্গীতের ক্রমবিবর্তনকে দেখেছিলেন সমাজতাত্ত্বিকের চোখে ধূর্জটিপ্রসাদ তাঁর ১৯৪২ সালে প্রকাশিত Modern Indian Culture এবং ১৯৪৫-এ Indian Music An Introduction নামক দুটি পুস্তকে। এ প্রকারের লেখা ওর বাংলায় নেই এক ‘কথা ও সুর’ পুস্তকের উপক্রমণিকা ছাড়া। মানবজীবন সর্বদাই সমাজকেন্দ্রিক।
সুতরাং সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে শিল্পের বদলায়। আর্নেস্ট হাউসার তাঁর’ The Social History of Art নামক ১৯৫১-এ দু খণ্ডের বিরাট পুস্তকে সমাজে মূল্যবোধের পরিবর্তনে কিভাবে শিল্পের ধরন পালটায় তার বিশদ আলোচনা করেছেন। ‘কুরত্ রঙ্গিবিরঙ্গী’-র শেষ পরিচ্ছেদটির আলোচ্য বিষয় এই ধারার অনুবর্তী।
অধ্যাপক দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় বইটির সুদীর্ঘ সমালোচনায় এই পরিচ্ছেদটির বিষয়বস্তুর আখ্যা দিয়েছেন ‘কি ছিল আর কি হল’। গায়ক ও শ্রোতা হিসেবে আমার মতামত যাই হোক, লেখায় আমি কোনও মূল্যায়ন (ভ্যালু জাজমেন্ট) করিনি বলেই আমার বিশ্বাস। এই প্রবন্ধের শেষ ভাগে এই নিয়ে। আলোচনা করার সময় হয়তো তা করতে হবে।
আরও পড়ুন: